স্বকৃত নোমান
আমাদের মূলধারার কয়েকটি নিউজপোর্টালের শিরোনাম দেখুন। ঢাকা ট্রিবিউনের শিরোনাম : ‘ইসলাম নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, রিমান্ডে বয়াতি।’ বাংলা ট্রিবিউন : ‘মহানবী (স.) ও ধর্ম নিয়ে কটূক্তি : গ্রেপ্তার বয়াতি তিন দিনের রিমান্ডে।’ কালের কণ্ঠ অনলাইন : ‘ইসলাম ধর্মের ব্যাখ্যা ও ভুল অপপ্রচার, বয়াতি গ্রেপ্তার।’ প্রিয়.কম : ‘মহানবীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য, বয়াতি গ্রেপ্তার।’ আমাদের সময়.কম : ‘মহানবীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য, বয়াতি গ্রেপ্তার।’ চ্যানেল আই অনলাইন : ‘ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের জেরে ডিজিটাল আইনে বয়াতি গ্রেপ্তার।’
পোর্টালগুলোর কর্তাব্যক্তিদের কাছে প্রশ্ন, শরীয়ত বয়াতি যে ইসলাম নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, মহানবীকে কটূক্তি করেছেন, ইসলাম ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন, আপনারা কি নিশ্চিত? নিশ্চিত হলে সেই কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য, কটূক্তি, আপত্তিকর, ভুল ব্যাখ্যার প্রমাণ দিতে পারবেন? কুরুচি, কটূক্তি, আপত্তিকর, ভুল ব্যাখ্যা কাকে বলে? আপনার কাছে যা সত্য তা-ই কি একমাত্র সত্য? আপনি কি সত্য-মিথ্যার বিধায়ক? আর অভিযোগ প্রমাণের দায় আপনাদের, না আদালতের? আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে কি আপনারা কাউকে অভিযুক্ত করতে পারেন? কোনো সংবাদের এমন শিরোনাম দিতে পারেন? এ ধরনের উস্কানিমূলক শিরোনাম কি সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতার আওতায় পড়ে?
ফেসবুকে এক লোক আমার সঙ্গে তর্ক করছিলেন এসব নিউজের স্ক্রিনশর্ট দিয়ে। তার অভিযোগ ছিলো, শরীয়ত বয়াতি মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। আমি বারবারই তার কাছে জানতে চাচ্ছিলাম, শরীয়ত বয়াতি কী কটূক্তি করেছেন সুনির্দিষ্ট করে বলুন। লোকটি বারবারই এসব নিউজের স্ক্রিনশর্ট দিচ্ছিলো, কিন্তু নিজে বলতে পারছিলো না কটূক্তিটা কী। পরে তাকে কয়েকটা কড়া ধমক দেওয়ার পর মন্তব্যগুলো মুছে দিয়ে সটকে পড়ে।
হে সাংবাদিকবৃন্দ, এ ধরনের শিরোনাম দিয়ে আপনারা উস্কানি দিচ্ছেন। শিরোনাম নয়, শিক্ষা-সংস্কৃতিতে অনগ্রসর একটি জাতির হাতে আপনারা একেকটি বোমা তুলে দিচ্ছেন। আপনাদের জেনে রাখা দরকার, শব্দই ব্রহ্ম, শব্দই শক্তি। শব্দ ব্যবহারে আপনাদের আরো সতর্ক হওয়া উচিত। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, কাউকে অভিযুক্ত করা গণমাধ্যমের কাজ নয়, গণমাধ্যমের কাজ অভিযোগের খবর পরিবেশন করা। আলেক্সা র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকার এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। আপনাদের পরিবেশিত খবরে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। লেখকের ফেসবুক থেকে।