একজন মাদ্রাসার মুহতামিম পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াবেন এটা তো খুবই দুঃখজনক বিষয়। না হয় তার কিছু দোষ ছিল, চাঁদেরও তো কলঙ্ক থাকে- তাই না?
তো কী দোষ ছিল তার? খুবই সামান্য দোষ। তিনি তার ছাত্রদের থেকে বিশেষ খেদমত নিতে পছন্দ করতেন, এই আর কি? গ্রামের লোকজন মাতব্বরেরা সবই জানতেন, কিন্তু দুরন্ত যৌবন কি বাধ মানে?
অনেকে বলেন যে মাদ্রসার শিক্ষকরা পরিবার দূরে থাকে বলে তাদের কষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু মুহতামিম মাওলানা নোমান কবীর সাহেবের এই কষ্টটা পোহাতে হতো না। কারণ মাদ্রাসাটি তার নিজের বাড়িতেই অবস্থিত।
মুহতামিমের এই বিষয়টাকে এলাকাবাসী বেশ প্রশ্রয়ের দৃষ্টিতেই দেখে এসেছেন এতদিন। তাদের মন্তব্যে সেটাই সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়। যেমন: মাদরাসা ও মসজিদের সেক্রেটারি আকবর মিয়া বলেন, “নোমানের আচরণ এত খারাপ যে এলাকায় মুখ দেখানোর মতো নয়। সে ছেলে ছাড়া কিছুই বুঝে না। আমরা বহু নিষেধ করেছি, গ্রামের কয়েকটি লোকের কারণে সে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।”
যেহেতু মাদ্রাসা একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তাই ধর্ষিত ছাত্রের বাবাও ধর্মানুভূতিতে কাতর। তিনিও ইনিয়ে বিনিয়ে বলেন, “মাদ্রাসা হলো রসুলের বাগান। মাদরাসার বদনাম করতে চাইনি। আর কারো সন্তান যেন নির্যাতনের শিকার না হয় সে জন্য নোমানকে মাদরাসা থেকে বহিষ্কারের কথা বলেছিলাম, তাকে বহিষ্কার না করায় বাধ্য হয়ে মামলা করেছি।”
মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন থেকেই মোহতামিম ছাহেবের বালকদের প্রতি এই পক্ষপাতিত্বপূর্ণ দৃষ্টিপাতকে প্রত্যক্ষ করেছেন কিন্তু যেহেতু তারা বাচ্চাগুলোর পিতা নন তাই কেউ সিরিয়াস হন নি। কেউ হালকা আপত্তি করলেই তো বেতন বন্ধ। মানে তারা সবাই সব জানতেন কিন্তু কেউ পুলিশকে বলার প্রয়োজন মনে করেননি।
এক শিক্ষক জানান, “তার রুমে সব সময় ছেলেদের আড্ডা থাকে। মাদরাসার সাবেক ছাত্ররাও তার খেদমত করতে মাদরাসায় আসে। আমরা ছাত্রদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক না রাখতে নিষেধ করার কারণেই আমাদের বেতন বন্ধ করে দেন মুহতামিম ও তার চাচাতো ভাই মাদরাসার শিক্ষক আবু সাঈদ মিজবাহ।”
বাহ! বাহ!! সাবেক ছাত্ররাও আসে খেদমত করতে? ছাত্রদের বেশ ভালোই তালিম দিতে পেরেছেন তিনি বোঝা গেল। প্রস্তুত নবপ্রজন্ম। বেশ জমজমাট সমকামিতার মজমাটা হঠাৎ করে ভেঙে গেল।
নোমান ছাহেব আজ কোথায় পালিয়ে আছেন জানি না, তবে এমন বহু নোমান বাংলাদেশের অগণিত মাদ্রাসায় বেশ সম্মানের সাথে আছেন এবং খেদমত নিচ্ছেন। সামনে ওয়াজের মৌসুম। তারা বিভিন্ন মাহফিলের আসন অলংকৃত করবেন, টাকা তুলবেন মাদ্রাসার এতিম অসহায় ছাত্রদের জন্য।
লেখক : রিয়াদুল হাসান, লেখকের ফেসবুক থেকে নেওয়া।
মন্তব্য করুন